দেশের মানুষের নজর তার মূল সমস্যা থেকে দূরে রাখার বিষয়ে রাষ্ট্রশক্তির হাতে যুদ্ধের দামামার থেকে বড়ো হাতিয়ার আর নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের অভাব, শিক্ষা এবং চিকিৎসার আকাশছোঁয়া ব্যয়ভার…

দেশের মানুষের নজর তার মূল সমস্যা থেকে দূরে রাখার বিষয়ে রাষ্ট্রশক্তির হাতে যুদ্ধের দামামার থেকে বড়ো হাতিয়ার আর নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের অভাব, শিক্ষা এবং চিকিৎসার আকাশছোঁয়া ব্যয়ভার, দৈনন্দিন জীবনযাপনের কষ্ট। এই সব কিছু থেকে জনতার নজর ঘুরিয়ে দিতে যুদ্ধের থেকে বড়ো ভরসা আর কিছু নাই। শুধু কি তাই? দেশের সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনকুবের শিল্পপতির নামে করে দেওয়ার চলমান প্রক্রিয়া থেকে দেশবাসীর নজর ঘুরিয়ে রাখার বিষয়েও যুদ্ধ এবং যুদ্ধের দামামা একটা বড়ো অস্ত্র। সরকারি চাকরিগুলির অধিকাংশ শূন্যপদ বিলোপে মানুষের জীবন-জীবিকার উপরে নেমে আসা ভয়াবহ বিপর্যয়কেও মানুষ যাতে বিশেষ আমল দিতে সময় না পায়, যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়া সৃষ্টি সেই উদ্দেশে বিশেষ ভাবেই কার্যকরি। প্রতিবছর জীবিকাহীন বেকার যুবকযুবতীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যাতত্ত্বের নিদারুণ বাস্তবতা থেকে দেশবাসীর নজর ঘুরিয়ে দিতেও যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধের দামামা অত্যন্ত কার্যকরি একটি হাতিয়ার। ফলে দেশের সম্পদ লুন্ঠনকারী রাষ্ট্রশক্তি দেশবাসীকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যেই সময় সময়ে এই যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরীতে তৎপর হয়ে উঠতে পারে।

শাসকদল এবং প্রধান বিরোধী দল। রাজ্যে যাদের বাইরে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব কার্যত শূন্য। পরস্পর প্রতিপক্ষ সেই দুই দলের কেউই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির শিকার হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থীর পাশে নেই। থাকলে বছরের পর বছর যাঁরা পথে বসে রয়েছেন। যাঁদের ন্যায্য পাওনা চাকরিগুলি লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অন্যেরা লুঠ করে নিয়েছে। সেই ঠকে যাওয়া ছেলে মেয়েদের পাশে এই দুই দলের কেউই দাঁড়ায়নি কেন?

খেলাটা ঠিক চোর পুলিশের নয়। খেলাটা চোরে চোরে মাসতুত ভাইয়ের। আর মাঝখানে সাক্ষীগোপাল আইন আদালত। এবং একদিকে ক্রীড়নক সিবিআই, ইডি, ইত্যাদি। আর অন্যদিকে বেকুব জনগণ। অ বাবুর জামিন হয়েছিল আগেই। এবারে জ বাবুর জামিন হলো। প বাবুও একটি জামিন নিয়ে বসে রয়েছেন। খেলাটা শুরু হয়েছিল সারদা আর নারদা দিয়ে। সেই যে ম বাবু উডবার্ন ওয়ার্ডেই তাঁবু ফেলে বসে গিয়েছিলেন প্যানিক অ্যাটাকের নাম করে। সেই শুরু। তারপর শুধু আয়ারাম আর গয়ারামের খেলা। এজলাস থেকে সরকারী অতিথিশালা। জনগণের করের টাকায় ঢালাও চিকিৎসা পরিসেবার ফ্রি বন্দোবস্ত। এবং হুইল চেয়ার। যিনি গ্রেফতার হওয়ার চব্বিশ ঘন্টা আগেও সিং নেড়ে রাজনীতির ময়দান কাঁপাচ্ছিলেন। দেখা গেল গ্রেফতার হতেই বুকে হাত দিয়ে হুইলচেয়ারে বসে পড়েছেন। গ্রেফতারও হবেন। আবার নিজের পায়ে নিজেই হাঁটবেন। তা কখনো হয়। এমনি এমনিই তো আর রাজনীতি করছেন না!

মক্কেলের আইনজীবী অবশেষে দাবি করলেন, কোন সম্পর্কই নেই। কার সাথে কোন সম্পর্ক নেই? যার দু দুটি ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে পঞ্চাশ কোটি পঞ্চাশ কোটি করে কালোটাকা উদ্ধার হয়েছিল। সেই বান্ধবীর সাথেই নাকি মক্কেলের কোন সম্পর্কই নেই। অর্থাৎ নিতান্ত অযথাই মক্কেলকে আঠাশ মাস ধরে কয়েদ করে বিনা জামিনে ধরে রাখা হয়েছে। যে বান্ধবীর সাথে মক্কেলের কোন সম্পর্কই নেই। সেই বান্ধবী’র কথায় বিশ্বাস করে মক্কেলকে আটক করে রাখা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। বান্ধবী হোক না হোক। একটা সম্পর্ক তো থাকতে হবে। আটক করে রাখতে গেলে। সেই সম্পর্কই যদি না থাকে, তবে মক্কেলকে আটক করে রাখা নিতান্তই বেআইনি কাজ নিশ্চয়ই। আমাদের অ্যাডভোকেট মহাশয় তাঁর মক্কেলের জামিন চাইতে গিয়ে সেই সম্পর্ক না থাকাকেই ঢাল বানিয়ে তাঁর সওয়াল শানিয়েছেন অবশেষে।

হাতের আঙ্গুলে যদি নিজের কৃতকর্মের ফল নিয়ে জনসমক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াতে হয়। তবে কেমন লাগে? জানতে হলে প্রশ্ন করতে হবে মাননীয় জনপ্রতিনিধিকেই। তিনি মাননীয় কেন? না, তিনি ভোটের ময়দানে বিজয়ী হয়ে দেশের আইনসভায় পা রাখা জনপ্রতিনিধি। তাই তিনি মাননীয়। তাঁর স্বভাব যেমনই হোক। তাঁর আচরণ যেমনই হোক। তাঁর কাজকারবার যেমনই হোক। একবার যদি নির্বাচনে মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের আইনসভায় পদার্পণ করা যায়। আর পায় কে। তখন প্রত্যেকেই মাননীয়। এটাই গণতন্ত্রের বিধান। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে পণ্ডিত থেকে মূর্খ। ভদ্র থেকে ইতর। নেতা থেকে চামচা। সেলিব্রিটি থেকে গুণ্ডা। নিতান্ত ভদ্রলোক থেকে চূড়ান্ত অভদ্রও যেকোন উপায়ে রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়ে নির্বাচনের একটা টিকিট হাসিল করে নিয়েই ভোটের ময়দানে নেমে যায়। যে জিতবে সেই মাননীয়। এটাই আমদের দেশের রীতি এবং রেওয়াজ।

প্রচারের কি মাহাত্ম্য! বিশ্বের যে দেশটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের গুরুত্ব সবচেয়ে কম। বলতে গেলে প্রায় শূন্য। সেই দেশটির নির্বাচন নিয়েই আবিশ্ব সবচেয়ে বেশি মাতামাতি। এবং বিশ্বের যে দেশেটির রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সবচেয়ে কম। সেই দেশের রাষ্ট্রপতিকেই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বলে চালানো হয়ে থাকে। বলছিলাম আম্রিকার কথা। আম্রিকা মানে অনেকের সেই সাধের আমেরিকা। সব পেয়েছির দেশ। যে দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া, এক শ্রেণীর মানুষের কাছে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার থেকেও অনেক বেশি মূল্যবান।

আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে! অপরাধী তাহলে সেই সঞ্জয় রাঈ। যাকে ধনঞ্জয় করার জন্য দিল্লী থেকে লালবাজার এক মত এক সুর। সেই যাকে আর জি করের ঘটনার বাহাত্তর ঘন্টার ভিতরেই গ্রেফতার করে নেয় কলকাতার পুলিশ। মনে আছে তো? সেই ফেলে যাওয়া ব্লুটুথ হেডফোনের সূত্র ধরে! যেটি মনে করে ফেলে না গেলে, লালবাজার থেকে সিবিআই কেউ সঞ্জয়ের টিকিটিও ছুঁতে পারতো না। সিসিটিভির ফুটেজ দেখিয়ে তো আর সেমিনার রুমে সঞ্জয়ের উপস্থিতি প্রমাণ করা যেত না। আবার সেই একই সিসিটিভির ফুটেজে সেই দিন সারারাত ঠিক কাদের কাদের ঐ কুখ্যাত করিডর দিয়ে যাওয়া আসা করার ছবি রয়েছে। আমাদের দেখানো হলো না কেন?